লাইভ নারায়ণগঞ্জ: স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় আলেমদের কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয় মুহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম। এরপর ধীরে ধীরে কোরআনে আকৃষ্ট হন এবং হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেশুরু করেন তিনি। একসময় নিজের ইচ্ছা পূরন করতেই স্কুল ছেড়ে ফতুল্লার লালপুর পৌষারপুকুরপাড়ের মারকাযুন নুজুম ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসায় ভর্তি হন, এবং মাত্র ৪ মাসে কোরআনে হাফেজ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জণ করেন তিনি ।
নাহিদুলের বাবার বলেন, হালাল রুজির ফল দিয়েছেন আল্লাহ। আর শিক্ষক জানান, আর দশ জন হাফেজের চেয়ে নাহিদুলের হাফেজ হওয়ার গল্পটা একটু আলাদা।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, মাদরাসায় খাবারের সময় আধঘন্টা হলেও ১০ মিনিটে খাবার শেষ করে কোরআন পাঠে মনযোগী হতেন মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম। মাগরিব ও শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে মহান রবের দরবারে কান্নাকাটি করতেন। প্রার্থনা করতেন আল্লাহ যেন তার মহৎ আশা পূরণ করেন। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে নাহিদের মুখে উচ্চারণ হতো কোরআনের বাণী। তার মন, ধ্যান—জ্ঞান জুড়ে থাকতো একটাই চাওয়া। সরল, নিষ্পাপ এ কিশোরের দোয়া কবুল হয়েছে— তাই মাত্র ১২০ দিনে কোরআনে হাফেজ হওয়া সম্ভব হয়েছে।
মাদরাসার অধ্যক্ষ ও লালপুর পৌষারপুকুরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতী ইয়াসিন আকরাম চৌধুরীর বলেন, মহান আল্লাহ চেয়েছেন বলেই এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, নাহিদুল ইসলাম যে হাফেজ হয়েছে, তা অন্য দশ জন হাফেজের মতো না। অন্যদের বাবা—মা ছোট বেলায় মাদরাসায় ভর্তি করায় আর নাহিদ জেনারেল লাইন থেকে ৭ম শ্রেণি পড়া অবস্থায় মাদরাসায় ভর্তি হয়ে হাফেজ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাহিদুলের সপ্তম শ্রেণিতে রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হওয়ায়, বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটলো। এখানে মহান আল্লাহ তায়ালার ইশারা রয়েছে। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, আল্লাহ যেন তার আলেম হওয়ার স্বপ্নও পূরণ করেন।
নাহিদুলের বাবা মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে মেঝো ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তি করলেও কয়েক পাড়া কোরআন মুখস্থ করলেও হাফেজ হতে পারেনি। তাই ছোট ছেলেকে হাফেজ করার স্বপ্ন ছিলো। যখন শুনলাম ছেলে হাফেজ হয়েছে, তখন আমরা পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছি।
মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, যখন আমি স্কুলে পড়ি তখন থেকে আলেমদের বয়ান খুব ভালো রাখতো। তখন থেকে স্বপ্ন দেখতাম আল্লাহ তায়ালার কোরআন আমি আমার সিনায় নিবো। মাত্র চার মাসে কীভাবে সম্ভব হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি খুব কম ঘুমাতাম। অন্যদের খেলাধুলা করতে কিংবা বেড়াতে যেতে দেখলেও, আমি তা করিনি। এমনকি খাওয়ার সময় বাঁচিয়েও পড়ায় মনযোগী থাকতাম।
ভবিষ্যত স্বপ্ন নিয়ে নাহিদুল বলেন, আমার ইচ্ছা আমি হক্কানি আলেম হবো। পথভোলা মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় ডাকবো।
এ ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এমন বিরল সাফল্য ধরে রাখতে হবে। যাতে কোরআনে হাফেজের সংখ্যা আরও বাড়ে। তারা নাহিদুল ইসলামের আরও সাফল্য কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, নাহিদুল ইসলামদের গ্রামের বাড়ি দিনাজুপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার রাজারামপুর গ্রামে। সে গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে আসে। মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার আগে সে হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়ররত ছিলো। অন্য দুই ভাই ও মা—বাবার সাথে বর্তমানে ফতুল্লার লালপুর পৌষারপুকুরপাড় এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে।