আহমদ আমিন, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ব্যাট-বল হাতে যুদ্ধ ময়দানে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের দল। জয় হাতিয়ে নিতে উদ্দমী এ দল। চার-ছক্কার ছন্দে প্রতিপক্ষকে করছে কোণঠাসা। বিভিন্ন সময়ে দলে বদলেছে ক্যাপটেন, বদলেছে বলার ও ব্যাটসম্যান। সেই সাথে খেলার ভেনু ও প্রতিপক্ষও বদলেছে। তবে বদলায় নি জয়ের ধারা। টানা তিনটি বছর নারায়ণগঞ্জের জন্য বয়ে এনেছে শিরোপা।
বলছি, নারায়ণগঞ্জ অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট দলটির কথা। নারায়ণগঞ্জের দামাল কিশোর-দল ওরা। ওদের ধারাবাহিক গৌরবময় জয়ে খেলোয়াড়দের মেধা-পরিশ্রম তো আছেই, সাথে ম্যানেজমেন্টসহ পৃষ্ঠপোষকদের অবদানও। তবে, ক্ষুদে এই কিশোরদের তৈরী করতে যিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি এই দলটির কোচ ও ম্যানেজার। যার হাত ধরে প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জ থেকে মেধাবী উদিয়মান খেলোয়াড় আত্নপ্রকাশ পাচ্ছে। তিনি সকলের প্রিয় মুখ ‘পাপ্পু ভাই’। যিনি নেপথ্যের কারিগর। ক্ষুদে ক্রিকেটারদের প্রিয় পাপ্পু ভাইয়ের পুরো নাম সোহেল হোসেন পাপ্পু। তিনি নিজেও কিশোরকাল থেকেই ক্রিকেট খেলেছেন। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বিভিন্ন ক্লাব, জাতীয় ও আন্তজাতিক অঙ্গণে।
গেল শুক্রবার (১৮ জানুয়ারী) ইয়ং টাইগার্স অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর ফাইনালে মুন্সিগঞ্জকে হারিয়ে তৃতীবারের মতো শিরোপা অর্জন করেছে নারায়ণগঞ্জের দামাল কিশোর-দল। বাবা-মার সহযোগীতা, নিজেদের উদ্দমী মনোবল দিয়ে লাভ করেছে এই জয়। এই জয়ের পিছনে আরও এক জোড়া হাত। কোচ সোহেল হোসেন পাপ্পু। যার প্রশিক্ষণ ও খেলার দূর্দান্ত ট্যাকটিক নিয়ে কিশোররা অর্জন করেছে অবিসম্ভাব্য জয়।
সাবেক ক্রিকেটার সোহেল হোসেন পাপ্পু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের ২৭ আগস্ট। বাবা গোলাম মোস্তফা ও মা রিজিয়া বেগমের পরিবারের আদরের ছোট সন্তান তিনি। পরিবারের ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ১৯৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৭ সালে নারায়ণগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।
পাপ্পু ছোট কাল থেকেই পারিবারিকভাবে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ লাভ করেন। তার বড় দুই ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও জুয়েল হোসেন মনা যারা জাতীয় দলে অনেক খেলেছেন। তাদের পারদর্শীতা দেখেই মনস্থির করেন ক্রিকেটার হবার।
তাই স্কুল জীবন থেকেই মাঠে ব্যাট হাতে চমক দেখিয়েছেন। আর ১৯ বছর বয়সেই অংশ নিয়েছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে। খেলোয়াড় হিসেবে ভিক্টোরিয়া ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, সিটি ক্লাব, অগ্রণী ব্যাংক ক্লাব সহ নানা সুপরিচিত ক্লাবের আস্থার প্রতিক ছিলেন। খেলায় পারদর্শীতার জন্য জাতীয় বিভাগেও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে এসেছেন।
মাঠে ক্রিকেটার হয়ে যথেষ্ট সময় দেবার পর মনস্থীর করলেন নতুন প্রজন্মকে ক্রিকেটের মাঠে সঠিক দিশা দিবেন। আর এইভাবেই হয়ে উঠলেন নারায়ণগঞ্জ ক্ষুদে ক্রিকেটারদের কোচ। তার হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জ অনূর্ধ্ব-১৪ দলটি ঢাকা বিভাগীয় টুর্নামেন্টে লাভ করেছে টানা তিন বারের জয়।
ক্ষুদে ক্রিকেটারদের জয় নিয়ে লাইভ নারায়ণগঞ্জের সাথে কথা হলো কোচ ও ম্যানেজার সোহেল হোসেন পাপ্পুর সাথে।
তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আল-হামদুলিল্লাহ, আমার ছেলেরা মাঠে চমক দেখিয়ে জয় হাসিল করতে পেরেছে। এই বছর ১০৪ জন টিমের জন্য প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট করেছিলাম। বাছাই পর্ব শেষে রয়ে যায় ৩০ জন। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে খেলায় পারদর্শী করার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।
ক্ষুদে ক্রিকেটারদের জয়ের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আসলে কিশোরদের আদর-শাসন করেই শিখিয়েছি। যদি স্ট্রিক্ট হতাম তবে তাদের ডেভেলপমেন্ট সম্ভব হতো না।
ক্ষুদে ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি তাদের প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ উজ্জল। এ বছরের টিম থেকে জিসান আলম, ফয়সাল, শ্রাবণ খুব ভালো খেলেছে। ২০১৭ সনের নারায়ণগঞ্জ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের ক্যাপটেইন মাহফুজুর রহমান রাব্বী বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৮ বাংলাদেশ দলের ক্যাপটেইন। সেই সাথে ওই বছরের আবু সাঈদ বিকেএসপিতেও সুযোগ পেয়েছে। প্রতিবছরই আমাদের ছেলেরা এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা অসম্ভবকে জয় করবে, এটিই আমি বিশ্বাস করছি।