প্রবাসীর জমি দখলের ঘটনায় গ্রেফতার বিকি’র সহযোগি জাহিদুল আলম চৌধুরীকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে ফতুল্লা থানা পুলিশ। তিনি নতুন চাষাড়া জামতলা এলাকার মৃত আফসার চৌধুরীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরের তাকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাব উদ্দিনের আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত জামিন শুনানির জন্য ১ এপ্রিল ধার্য তারিখ রেখে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখে জাহিদুল আলমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে ২৭ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরা ব্লক সি এর ১০ নম্বও রোডের ৩৭৫/৩৭৮ নম্বর বাড়ির মৃত হাজী মহসিন আলী খানের ছেলে মো. আজিজুল গাফফার খান বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা আসামী করা হয়, নতুন চাষাড়ার জামতলা এলাকার মৃত মো. হাফিজুর রহমানের স্ত্রী নুরুন নাহার (৬৫), মৃত আফসার চৌধুরীর ছেলে জাহিদুল আলম চৌধুরী, ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার লাভলু চৌধুরীর ছেলে বিকি (২৮) এবং জিতু (২৭)।
প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সম্মন্ধি বিকির নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল বাড়ির মেইন গেট ভাঙচুর করে জমি দখলের চেষ্টা চালানো এবং জমির মালিককে জমি খালি করে দিয়ে এলাকা ছাড়তে হুমকি প্রদান করা হয়, এমন অভিযোগ তুলে ওই মামলাটি দায়ের করেন প্রবাসী গাফফার খান।
এদিকে মামলা দায়েরের পরপরই জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হলেও এখনও অধরা রয়েছে বিকিসহ অন্যান্য আসামীরা। বলা হচ্ছে, প্রভাবশালী সাংসদের নিকট আত্মীয় হওয়াতে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
প্রবাসী আজিজুল গাফ্ফারের জানান, তিনি ২০০৮ সালের ৫ এপ্রিল ৫৩১৩ নং সাফকবলা দলিল মুলে নুরুন্নাহারের কাছ থেকে ৬ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। একই তারিখে ৫৩১৮ নং সাফ কবলা দলিল মূলে একই দাগে থাকা মো. শাহজাদার ওয়ারিশগনের কাছ থেকে আরও ৬.৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। কেনার পর তিনি মোট ১২.৫০ শতাংশ জমি ভোগ দখলে আছেন।
তিনি বলেন, জমিটি ক্রয়ের পর বাউন্ডারি দেয়াল করে নাজমা বেগম নামে একজনকে জমিটি দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে আমি সিঙ্গাপুর চলে যাই। ৯ বছর পর আমি সিঙ্গাপুর থাকাবস্থায় নূরন্নাহার ও তার মেয়ের জামাতা জাহিদ আমার জমির ভেতরে তাদের ২ শতাংশ জমি রয়েছে বলে দাবি করে। এ নিয়ে তারা ইতোপূর্বে আমার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় একটি জিডি করেন।
গাফ্ফার জানান, তারা আমার বিরুদ্ধে আদালতে ১৪৫ ধারায় ফৌজদারী মামলা করেন। ওই মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। পরে আমি ১৪৪ ধারায় দেওয়ানী মামলা করি। যা এখনও বিচারাধিন রয়েছে।
তিনি বলেন, বুধবার (২৭) দুপুরে ভিকি, জাহিদ, জিতুসহ ১০-১২ জন আমার জমির মেইন গেটের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। তারা আমার কেয়ারটেকার নাজমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিয়ে বলে বৃহস্পতিবার মধ্যে ওই জমি আমাকে ও আমার কেয়ারটেকার নাজমা বেগমকে খালি করে দিতে হুমকি দিয়ে চলে যায়। অন্যথায় আমাকে ও আমার কেয়ারটেকারকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে বিকির বাবা ফয়েজ উদ্দিন লাভলু গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি অবগত আছেন। মূলত তার ভাতিজা জিতু ওই জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক। কিন্তু সেটি রঞ্জু নামে একজন দখল করে আছেন। তাকে জমির কাগজপত্র দেখাতে বললেও সে দেখায়নি। তাই জিতুর জমি জিতু দখলে নিয়েছে। রঞ্জু যদি তার প্রকৃত কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারে তাহলে তাকে তার জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে জমির মালিক আজিজুল গাফফার বলেন, রঞ্জু তার আপন ভাগ্নে। তার অবর্তমানে রঞ্জুই এই জমির দেখাশুনা করে থাকে। তাই তার কাছে তো কোন কাগজপত্র থাকার কথা নয়। আমার জমিতে আমার নামে সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। কোন কথা থাকলে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতো তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১ জানুয়ারি পশ্চিম মাসদাইরে এক ব্যবসায়ীকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছিলো বিকি। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জেলার সব লাইসেন্সধারী অস্ত্র থানা ও জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী শাখায় জমা নেয়া হয়। তাই প্রশ্ন উঠেছিলো বিকির সেই অস্ত্রটি বৈধ কি-না। তবে রহস্যজনক কারনে প্রশাসন বিকির অস্ত্র রহস্য উন্মোচন করেনি।