প্রাত্যহিক জীবনে আগুন অত্যন্ত উপযোগী ও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ঠাণ্ডা কিংবা শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখতে, অন্ধকারে দিশা খুজতে, প্রতিদিনের খাবার রান্না কতকাজেই না এর ব্যাপক ব্যবহার। এত সুবিধা থাকলেও আগুন অনেক বিপজ্জনক। এটি কখনো স্পর্শ করা যায় না। এর সংস্পর্শে যা আসে তার সবই পুড়ে যায়। তাই আগুন ব্যবহারে অত্যন্ত সতকর্তা অবলম্বন করতে হয়।
বৈজ্ঞানিক ভাষায়, আগুন জ্বালানোর জন্য তিনটি উপাদানের প্রয়োজন পড়ে: অক্সিজেন, জ্বালানী এবং তাপ। জ্বালানী হিসেবে কাঠ, কয়লা, তৈল এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ পরিবেশের সর্বত্র রয়েছে। একবার আগুন জ্বলতে শুরু করলে পরবর্তীতে এটি নিজেই তাপ উৎপাদনে সক্ষম। কখনো কখনো এটি নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বলতে শুরু করে।
আগুনের এই নিয়ামকগুলো্র মিশ্রণ সচরাচরই ব্যবহার করছি আমরা। এদের মধ্যে- এলপিজি (লিকুয়িড প্রোপিলিন গ্যাস) সিলিন্ডার, ট্রান্সফর্মার, রাসায়নিক পদার্থ অন্যতম। তবে এদের ব্যবহারে অসতর্কতা অবলম্বনে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সদ্য ঘটে যাওয়া ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকান্ড এর প্রজ্জলিত প্রমাণ। ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বহুতল ভবনগুলোর নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম ও উপরের তলায় বসতবাড়ী। আর এগুলোয় বিদ্যুতের যোগান দিতে এলাকার সরু রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার। এমন পরিস্থিতিতে হালকা অসাবধানতাই এলাকাবাসীর জন্যে কাল হয়ে যায়। সিলিন্ডার, রাসায়নিক পদার্থ ও বৈদ্যুতিক খোলা ট্রান্সফর্মার এক জায়গায় হলে, একটিতে আগুন লাগলে বিস্ফোরণসহ অন্যটিতে চেইন রিয়েকশনের মতো আগুন ধরে। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আগুনের তান্ডব।
সভ্য সমাজে জীবিকা নিবার্হে অনেক বিপজ্জনক বস্তু নিয়েই আমাদের কারবারি। এদের সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহারে আমরা নানা দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারবো।
কীভাবে আগুন নির্বাপণ করবেন:
আগুনকে তিনটি পৃথক উপায়ে নির্বাপণ করা সম্ভব। নিচের তিনটির যে-কোন একটি সহায়ক উপাদানকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে তা সম্ভবপর –
-যদি আগুনকে তার সাহায্যকারী জ্বালানী এবং অপরাপর জ্বালানীকে দূরে রাখা যায়, তাহলে আগুন জ্বলবে না।
-অক্সিজেন প্রত্যাহারের মাধ্যমে আগুন নিভানো সম্ভব যা শ্বাসরোধকারী আগুন নামে পরিচিত। আগুন খালি জায়গায় জ্বলতে পারে না অথবা এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বারা আবৃত থাকাবস্থায় জ্বলে না।
-তাপ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবচেয়ে প্রধান ও সাধারণ উপায় হচ্ছে জল ব্যবহার করা যা আগুনকে বিস্তৃত ঘটাতে সাহায্য করে না।
কিন্তু ম্যাগণেসিয়ামজনিত শিখার সাহায্যে সৃষ্ট কিছু আগুনের সর্বাগ্রাসী বিচ্ছুরণকে আটকানো যায় না। এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য অগ্নিনিবারক সহায়ক যৌগকেও পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম।