স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। তার মৃত্যুতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মাসব্যাপি আয়োজনের প্রথম দিনের প্রায় সকল কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষ্যে মাস ব্যাপি নানা আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) সকালে বর্ণাঢ্য র্যালীর করা হবে। র্যালীতে জেলা ও মহানগর কমিটির সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবে। র্যালীর আগে কেক কেটে ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাস ব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হবে। অন্যান্য সময় আলাদা ভাবে প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উৎযাপন করা হলেও এবার একসাথেই বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে এই দুই কমিটি।
তবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলে আওয়ামীলীগসহ দলটির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে শোক নেমে আসে।
বরণ্য এই নেতার মৃত্যুতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ বৃহস্পতিবার রাত ১১.৫০টার সময় লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, আমরা তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করি। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের আগামীকালের (শুক্রবার) সকল আয়োজন- কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে আমাদের দলীয় কার্য্যালয়ে শুধু মাত্র জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তলন করা হবে। এছাড়া মাসব্যাপি কর্মসূচীর অন্যান্য আয়োজনের বিষয়ে পরে জানানো হবে।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। দেশে না থেকেও সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা) আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচিত সাংসদেরা শপথ নিয়েছেন। তবে শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে তাঁর চিঠিটি আজই স্পিকারের কাছে জমা দেওয়া হয়।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারিতে ঢাকায়। তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭০ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ–সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি এক কন্যার জনক। তাঁর স্ত্রী শিলা ইসলাম ২০১৭ সালের অক্টোবরে মারা যান।