এমপি শামীম ওসমানের লোক বলে তাকে ধরা হচ্ছেনা: সাকির বাবা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কাউন্সিলর সজলসহ ছয়জন তার ছেলেকে অপহরনের সাথে জড়িত। সজল এমপি শামীম ওসমানের লোক বলে তাকে ধরা যাচ্ছেনা বলে পুলিশ তাকে জানিয়েছিলো।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সাদমান সাকির জন্মদিনে তার উদ্ধারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে একথা বলেন অপহৃত শিশু বাবা সৈয়দ উমর খালেদ এপন।


মানববন্ধনে সাদমান সাকির পিতা সৈয়দ ওমর খালেদ এপনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলার আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির প্রমুখ।
সাকি চৌদ্দমাস আগে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের সময় তার বয়স দেড়বছর ছিলো। শনিবার ছিলো তার জন্মদিন। সাকির দাদা মহিউদ্দিন দুলাল নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টানা ২৪ বছর জেলা কমান্ডার ছিলো।
বক্তব্যে সৈয়দ ওমর খালেদ এপন আরো বলেন, আমি ওসমান লীগ করিনা আমি আওয়ামীলীগ করি। আমাদের পরিবার আওয়ামীলীগ করে। কিন্তু তারপরেও ছেলেকে পাওয়ার আশায় ছেলেকে অপহরনের পরপরই আমি এমপি শামীম ওসমানের কাছে যাই। ছেলেকে উদ্ধার করে দিতে বলি। তিনি আমাকে জানান, কে এ ঘটনা ঘটাইছে ? আমি বললাম, যার জন্য আমি পাঁচ বছর শান্তিতে ঘুমাইতে পারিনা। বললেন ঠিক আছে আমি দেখতাছি। তিনি কি দেখছেন জানিনা। তারমতো মহান ব্যাক্তির কাছে বলার পরেও আমার ছেলে উদ্ধার হয়নি। কয়েকদিন আগে আরেকদিন আমি তার কাছে গেলাম। সেখানে একটি পত্রিকার সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন। আমি এমপি শামীম ওসমানকে চাচা বলে সম্বোধন করি। আমি তাকে বললাম, চাচা অনেক হইছে। আমার ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করো। তারপর আমি বইলা দিতাছি। আমার প্রশ্ন, আপনেই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তো প্রতিদিনই আপনার কথা হয়। প্রতিদিন-ই কথা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে বলে তো আপনি-ই আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দিতে পারেন। কেন আপনে করেন নাই ? আপনে জনসভা করলেন।

অনেক বড় জনসভা করছেন। গার্মেন্টসের লোক ভাড়া কইরা আনছেন। আপনের মঞ্চের পাশেই আমার ছেলের ফেষ্টুন ছিলো। আমি ইচ্ছা কইরা-ই লাগাইয়া দিছি। দেখি আপনি কি বলেন। আপনে এত ইতিহাস কইলেন। কিন্তু একটি বারও আমার সন্তানের কথা বললেন না। শামীম ওসমান সাব আপনে বলছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের রক্ত নাকি গরম হয়। আপনার রক্ত যদি গরম হয় তাহলে আমিও তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমার রক্তও তো গরম। আমি পরিস্কার বলে দিতে চাই আমি কাউকে ভয় পাই না। ২০০১ এর আগে আকাম কুকাম কইরা নারায়ণগঞ্জ থেইকা পলায় গেছেন। পুলিশ আমগো ধরছে। মামলা আমরা খাইছি। বছরের পর বছর বাড়িত ঘুমাইতে পারি নাই। ফিরা আইসা আপনে জনগনের নেতা সাজছেন। কর্মীগো ছাইরা গেলেনগা জননেতা। এপন বক্তব্যে আরো বলেন, সজলের বাড়ি আমার বাড়ি একসাথে। অনেক আগে আমি কাউন্সিলর নির্বাচন করার ঘোষনা দিছি। সে অনেক পরে দাড়ায়। আমি নাকি আইভী পন্থী সে শামীম ওসমানপন্থী। আমার স্ত্রী’র কাছে গিয়া সে আমাকে বইসা যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। ২০১০ এ সে আওয়ামীলীগে জয়েন করলো। সে হয়ে গেলো স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ওর ছোট ভাই সাফায়েত আলম সানি জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করে নাই, জয় বাংলা স্লোগান দেয় নাই, হইয়া গেলো জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। এমপি শামীম ওসমানের লোক তাই এক পরিবারের পাঁচজন হইয়া গেলো নেতা। সাদমান সাকির বাবা এপন বলেন, তার সাথে বিরোধের জের ধরেই সজলসহ ছয়জন এপনের সন্তানকে অপহরন করেছে। এপন দাবী করেন, পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেছে এমপি শামীম ওসমানের লোক হওয়ায় তারা সজলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেনা।
সমাবেশে রফিউর রাব্বি বলেন, কাউন্সিলর সজল এ ঘটনায় জড়িত বলে সাকির বাবা বলেছে। সজল বা যে-ই জড়িত থাকুক না কেনো সাকিকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের তৎপর হতে হবে। পুলিশ সুপার জুয়ার বিরুদ্ধে, তেল চোরের বিরুদ্ধে, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে যেভাবে অবস্থান নিয়েছে সেভাবে সাকিকে উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমরা আশা করি। তার এ ধারা অব্যহত থাকলে নারায়ণগঞ্জবাসি পুলিশ সুপারের সাথে থাকবে।
নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, হত্যাকারি পরিবারের কাছে সাকির বাবা সাকিকে উদ্ধারের প্রত্যাশা করে চরম ভুল করেছে। কারন এমপি শামীম ওসমানের পরিবার আরেকটি অপরাধিকে সহায়তা করবে এটাই স্বাভাবিক।