কাদা জলে শহুরে মৎস চাষীর হই-হুল্লোড়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: চোরাবালির মতো কাদাতে তলিয়ে যাচ্ছে পা, এক পা দিয়ে, অন্য পা কাদা থেকে তুলতে হচ্ছে। এমন নরম কাদায় একটু কষ্ট হলেও ছেলেবুড়ো হাতড়িয়ে হই-হুল্লোড় করেই মাছ ধরছেন।

পুকুর-ডোবা সেচে মাছ ধরার এ দৃশ্য গ্রামে বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু উপরের দেওয়া বর্ণণার চিত্রটি শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের এক ডোবার।

সোমবার (৭ জানুয়ারী) সকালে জালকুড়ি কড়াইতলা এলাকায় নিট সেন্টিকেট গার্মেন্টসের সামনে অবস্থিত এক পুকুরে এভাবেই মাছ শিকার করছিলো স্থানীয়রা। ডোবাটির চারপাশে জনবসতি কম। কোথাও এক তলা, কোথাও আবার দু’তলা বাড়ি ঘর। তবে ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ইট পাথরের দালান।

প্রতিবছর পৌষ মাসে এমন মাছ ধরার আয়োজন চলে স্থানীয়দের মাঝে। ধানী জমিতে বর্ষা মৌসুমে মাছের চাষ করা হয় বলে আবাদ শুরুর আগেই পানি কমিয়ে দিতে হয় মাছ চাষিদের। তাই গত এক সপ্তাহ থেকে পাম্প দিয়ে ধানী জমি ও ডোবাটি সেচা হয়েছে। এরপর অল্প অল্প করে মাছ ধরে বিক্রী করা হয়েছে স্থানীয় বাজারে। এছাড়া ছোট আকারের মাছ বাছাই করে রাখা হচ্ছে আগামী বছরের জন্য।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হাজার শতক জমির মাঝে একটি ডোবা। বছর দশেক আগেও জমিগুলো এক ফসলী হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পরিত্যাক্ত থাকতো। পরে স্থানীয়রা শখের বশে মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে একটি সমিতির মাধ্যমে করা মাছ চাষ লাভজনক ব্যবসায় পরিনত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশই বিনষ্ট হয়ে গেছে। আগের মতো আর দেশী মাছের দেখা যায় না। তাই রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভারকার্প, বিগহেড, নাইলোটিকা, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রাজাতির মাছ চাষ করা হয়। তবে এবছর তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন বেশি।

পাশের এক মাছের খামারী মাসুদ মিয়া জানান, এই পুকুরের কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটি ও পানির উর্বরতায় পানিতে যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। মাছ তাই খেয়ে জীবন ধারণ করে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো পরিচর্যা নিতে হয় না। তাই এক ফসলি জমিতে মাছ চাষ লাভ জনক।

ওই এলাকার দ্বীন ইসলাম নামের আরো এক ব্যক্তি জানান, যে হারে বাড়ি ঘর ও কলকারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে হয়তো আর কিছুদিন হাতড়িয়ে গ্রামীণ এ মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়বে। তারপর মাছ ছাড়ার জয়গাই থাকবে না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments