গিয়াস উদ্দিন মডেল স্কুলে এড. এাসুম ‘ ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠাতেই কৃতিত’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শুধু জিপিএ ফাইভ পাওয়া নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠাতেই কৃতিত্ব বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম। তিনি বলেন, আমাদের দেশ, অর্থনীতি, লেখাপড়া সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অভিভাবকদের। শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার গিয়াস উদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল এন্ড কলেজ অডিটরিয়ামে ‘গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও বৃত্তি প্রদান-২০১৮ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ ৪-আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জ্ঞানার্জন করে ভালো মানুষ হয়ে বাবা-মা, এলাকা ও রাষ্ট্রের প্রত্যাশা পূরণ করবে। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভালো ফলাফল করে। এরকারণ বিশ্লেষণ করে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই বের করেছেন, বাঙালি শিক্ষার্থীরা কোন অবস্থাতেই সময় নষ্ট করেনা, পড়াশোনায় তারা মনোনিবেশ করে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে চায়।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অশিক্ষা, কুশিক্ষা দেয়া ভারতীয় টিভি সিরিয়ালগুলো বাচ্চাদের সাথে নিয়ে আপনারা দেখবেননা। ওইসব সিরিয়ালে এমন অনেক উপকরণ থাকে যাতে আমাদের চরিত্র হরণ করে।বাবা-মায়ের পাশে বসে বাচ্চারাও এগুলো দেখলে তাদের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি সন্তানই মানুষের মতো মানুষ হবে। কোন সন্তান যাতে ঝরে না পড়ে তার জন্য অভিভাবকদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন প্রসঙ্গে এড.মাসুম বলেন, ২০০৩ সালে আমি প্রেসক্লাবের সভাপতি থাকাকালীন চাষাঢ়া এক জনসভায় একটি বিজয়স্তম্ভের দাবি করেছিলাম। সেদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে একটি প্রজেক্ট বাদ দিয়ে বিজয়স্তম্ভ করার জন্য তখনকার সাংসদ গিয়াস উদ্দিন ১৬ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ঘোষণার প্রেক্ষিতে এলজিইডি মন্ত্রী ওই টাকা না নিয়ে বিজয়স্তম্ভ করার ঘোষণা দেন। আজ সেই বিজয়স্তম্ভ নারায়ণগঞ্জের প্রতীক। নারায়ণগঞ্জে লোগো। নারায়ণগঞ্জ বলতে সেই বিজয়স্তম্ভকে দেখা যায়। এটির জনক গিয়াস উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাসদাইরে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। মাসদাইরের সেই প্রতিরোধ স্মৃতিস্তম্ভটিও গিয়াস উদ্দিন তৈরি করে দিয়েছিলেন। এছাড়া বক্তবলীতে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করে দিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। বর্তমানে তিনি রাজনীতির পরিমন্ডলকে সংকুচিত করে শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
বক্তব্যে অনতিবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ শহরে গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল এন্ড কলেজের একটি ক্যাম্পাস শুরু করতে চান বলে জানান এড.মাসুম। এব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অনুমতি প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, সকল সৃষ্টির সেরা হচ্ছে মানুষ। সম্পদ মানুষের কাছে অনেক প্রিয়। এরজন্য মানুষ অনেক শ্রম বিনিয়োগ করে। তবে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান হলো তার সন্তান। যা কিছুই আমরা করি তা আমাদের সন্তানের জন্য। সন্তানকে পড়ালেখা শেখানোর মূল উদ্দেশ্য জিপিএ ফাইফ কিংবা ভালো রেজাল্ট করা হওয়া উচিৎ নয়। সন্তানকে পড়ালেখা করিয়ে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করাই অভিভাবকদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। সন্তান ভালো মানুষ হবে এমনটি আশা করলে সবচাইতে সচেতন হতে হবে অভিভাবককে। কিন্তু আমরা অভিভাবকরাই বেশ অসচেতন হয়ে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিচ্ছি। এতে বাচ্চারা বিপথগামী হচ্ছে।
বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন প্রসঙ্গে গিয়াসউদ্দিন বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন স্কুলে অধ্যায়ন করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা যাঁচাই করে যাতে নিতে পারে এজন্য এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন। এছাড়া স্কুলগুলোর মধ্যেও আভ্যন্তরীন প্রতিযোগিতা হবে, শিক্ষার মান বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরা বৃত্তি লাভের জন্য পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী হবে। অর্থাৎ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান অর্জন করার একটি বড় সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া অনেকগুলো স্কুলের শিক্ষার্থীরা যখন একসাথে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় তখন তাদের পরীক্ষা দেয়ার সাহস বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্পর্কে একটি পরীকল্পনা করে নিতে পারে। অনুষ্ঠানে ‘গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ আহবায়ক শিশির ঘোষ অমর, গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেন, গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, দৈনিক অগ্রবানী পত্রিকার সম্পাদক স্বপন চৌধুরী, বিমল চন্দ্র কর্মকার পল্টু, রাজীব আহমেদ, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে ‘গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ বৃত্তি প্রদান শুরু হয়। এবছর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩য় শ্রেণি ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।