স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ৩৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ড্রেজার জুনিয়র হাইস্কুলটি অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে ড্রেজারের কর্মচারীরা শিক্ষকদের উপস্থিতিতে স্কুলের তালা ভেঙে দেয়। প্রথম দিনেই বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে গিয়ে হাজির হন। তাদের মধ্যে ছিল এক উচ্ছ্বাসের ঘনঘটা। সেই সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষিকারাও যেন প্রাণ ফিরে পায়।
চালু হলো সেই ড্রেজার স্কুল, হাসিমুখে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশগ্রহণ
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্কুলটি খুলে ক্লাস চালুর জন্য স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার মালাকে নির্দেশ দেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতেই স্কুলটি খুলে দেওয়া হয়। ওই সময়ে ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
স্কুলের তালা ভাঙ্গার পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে উড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা। গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। সেই সঙ্গে সেলিম ওসমান ঘোষণা দেন ড্রেজার কর্তৃপক্ষ যদি খরচ চালাতে না চায় তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষই সেই সাড়ে ৩শ শিশুর লেখাপড়ার জন্য দায়িত্ব নিবেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষই প্রতিমাসে ১লাখ ৩০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করবে।
স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার মালা জানান, ৪ ফেব্রুয়ারী থেকেই স্কুলটি পুনরায় চালু করার জন্য নির্দেশ দেন এমপি সেলিম ওসমান। এছাড়া স্কুলটির প্রতি মাসের ব্যায়ভারের বিষয়টি তিনি পরবর্তীতে দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন।
৩৩ বছরের সেই স্কুলটি হঠাৎ করে বন্ধের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার অধিদফতরের প্রধান প্রকৗশলীকে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ রাখা হয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের স্কুলটি বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে মামলা বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী ব্যারিস্টার কাজী আখতার হোসাইন।সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মো. হানিফ ফরহাদ ও এ এইচ এম রেহানুল কবীর রনি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ বছরের পুরোনো স্কুল বন্ধ ঘোষণা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ওই সংবাদটি সংযুক্ত করে জনস্বার্থে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী কাজী আক্তার হোসেন। রিটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার পরিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়।
চালু হলো সেই ড্রেজার স্কুল, হাসিমুখে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশগ্রহণ
স্কুলটি বন্ধ করে দেয়ার পরে শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে স্কুলে আসলেও শিক্ষকরা প্রতিদিনই স্কুলটিতে আসতেন। তারা টিচার্স রুমে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে থাকতেন। স্কুলটিতে প্রতিদিনই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। তবে বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারী থেকে স্কুলটিতে আর জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার জন্য নির্দেশনা দেয় ড্রেজার পরিদপ্তরের উর্ধ্বতনরা। এছাড়া ৩১ জানুয়ারী স্কুলটির সকল শ্রেণীকক্ষে নতুন তালা লাগানো হয়।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর হাইকোর্ট স্কুলটি হঠাৎ করে বন্ধের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়ার পরদিন ৩১ জানুয়ারী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্কুলটিতে তদন্তে আসেন জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম। তিনি স্কুলটির বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন।