লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান তরিকুল ইসলাম সাকিববে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১’র একটি আভিযানিক দল। শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় সাকিবের কাছ থেকে একটি চাপাতিসহ বিপুল পরিমান জঙ্গিবাদি বই, লিফলেট ও নাশকতার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে র্যাব-১১’র ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল কাজী শামশের উদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জে তার কার্য্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত সাকিবের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে আটটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় রয়েছে পাঁচটি মামলা।
তিনি আরো জানান, সাকিব ২০০৪ সালে বাগেরহাট জেরার কচুয়া থানার মাধবকাঠি আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাস তেকে দাখিল, ২০০৬ সাথে খুলনার সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম, ২০১০ সালে ঢাকার মদিনাতুল উলুম বালক কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল এবং ২০১৩ সালে কামিল পাশ করেন। এর পাশাপাশি ২০১১ সালে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে বিবিএ পাশ করে ২০১৩ সালে এমবিএ তে অধ্যয়নরত থাকাকালীন সময়ে জসিমউদ্দিন রাহমানিয়া বছিলা মসজিদে বয়ান শুনতে যেতেন। জসিমউদ্দিনের বয়ানের মাধ্যমে তার মাঝে উগ্রবাদি চেতনা জাগ্রত হয় এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ঐ সময় সেই মসজিদে জেএমবি তৎকালীন দক্ষিণাঞ্চল প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে তার পরিচয় এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। তার মাধ্যমেই সাকিব ২০১৩ সালে জেএমবিতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে বাগরেহাটে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আবদুল্লাহ আল মামুন নিহত হলে দক্ষিণাঞ্চলে জেএমবির পুরো দায়িত্ব পান তরিকুল ইসলাম সাকিব।
জেএমবির দক্ষিণাঞ্চল নেতার দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকেই সাকিব দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যশোর, খুলনা, বাড়েগরহাট, বরগুনা ও পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় জেএমবির দাওয়াতি শাখার প্রধান হিসেবে কর্মী বাড়ানোর দায়িত্ব পালন করে আসছে। গত দুই বছর যাবত সে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে জেএমবির এ দায়িত্ব পালন করে আসছে। কর্মী সংগ্রহ করে জেএমবির সাংগঠনিক বিস্তারের পাশাপাশি অস্ত্র সংগ্রহের কাজও তিনি করতেন। তার মাধ্যমে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন ব্যক্তি জেএমবিতে যোগদান করে সক্রিয় কর্মী হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় গোপনে সাংগঠনিক ও দাওয়াতি কাজ করছে। সাকিবের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদানকারী অধিকাংশ সদস্য ইতিপূর্বে র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের কাছ থেকেই র্যাব সাকিব সম্পর্কে এসব তথ্য পায়।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাকিবের দেয়া তথ্যমতে র্যাব জানতে পারে, জামালপুর জেলায় যমুনা নদীর দূর্গম চরাঞ্চলে সে নতুন একটি প্রশিক্ষণ শিবির প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছে। জামালপুরের সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে অভিযান চালানো সহ সাকিবের বিরুদ্ধে নতুন করে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে র্যাব জানিয়েছে।