দাদুভাইয়ের আনন্দঘন এক বিকেল!

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, নেতা, সাংসদ এসব পরিচয়ের উর্দ্ধে কোমলমতি শিশুদের কাছে তিনি দাদু ভাই। শহর-বন্দরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে তাকে দাদুভাই অ্যাখায়িত করে কাছে টেনে নিয়েছেন। আর তাইতো সাপ্তাহিক ছুটির দিনও সেই দাদুভাই শারীরিক অসুস্থ্যতা নিয়েও বন্ধুর স্বরূপ নাতি-নাতনিদের (শিক্ষার্থীদের) সাথে আনন্দঘন একটি বিকেল কাটালেন।

শুক্রবার (২৯মার্চ ) সাংসদ সেলিম ওসমান বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া এলাকায় শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৩৫নং কামতাল হালুয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এদিকে যেমন তাদের সাথে হাসি ঠাট্টা করেছেন অন্যদিকে তাঁদের গুনে খুশি হয়ে পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন।

শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৩৫নং কামতাল হালুয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরন, সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বিকেল ৫টায় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি ১ ঘন্টা আগেই অর্থাৎ বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে পৌছেন। অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা তখন পর্যন্ত কেউ অনুষ্ঠান স্থলে পৌছাননি।

অনুষ্ঠান স্থলে পৌছেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে সোজা মঞ্চে উঠে পড়েন। তখন মঞ্চে চলছিলো শিক্ষার্থীদের নাচগান। মঞ্চে তিনি মাইক হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি এখানে কোন বক্তব্য দিতে আসি নাই। আমি আমার নাতি-নাতনিদের আনন্দ দেখতে চাই। তোমাদের হইচই আওয়াজ শুনতে চাই। তোমরা কি কেউ মঞ্চে এসে তোমাদের সমস্যার কথা গুলো আমাকে বলতে পারবে? তোমরা কে কি করতে পারো আমাকে করে দেখাবে?

এমপি সেলিম ওসমানের এমন আহবানে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মঞ্চে এসে তাদের স্কুলে বিদ্যমান সমস্যার কথা গুলো তুলে ধরেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি চলতি বছরের মধ্যেই ৫তলা সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটিকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল ভবনের কক্ষ গুলোতে দরজা-জানালা কাজ সম্পন্ন করা এবং ৩০টি কম্পিউটার দিয়ে একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ সহ আগামী সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেই সাথে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত নাগিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনটিও ৫তলা সম্পন্ন করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আর এসকল উন্নয়ন কাজ গুলো তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই সম্পন্ন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে স্কুল এন্ড কলেজে রূপান্তির করা হবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন এমপি সেলিম ওসমান। এ জন্য তিনি স্কুল দুটি পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয়দের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে মাঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে যান। সেলিম ওসমানকে কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর সাথে সেলফি বন্দী হয়। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঝালমুড়ি চেয়ে নিয়ে খান।

অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে স্কুলের ৪জন শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহনে উপস্থাপন করা হয় ইংরেজি ডায়লগ। যা দেখে এমপি সেলিম ওসমান মুগ্ধ হয়ে ৪টি ল্যাপটপ পুরস্কার ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে এমন ইংরেজি ডায়লগ আয়োজন করার আহবান রাখেন।

এরপরই অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বির্তক প্রতিযোগীতা। বির্তকের বিষয় বস্তু ছিল মাদকই যুব সমাজ ধ্বংসের একমাত্র কারন। উক্ত বিষয়ের উপর পক্ষে এবং বিপক্ষে মোট ৬জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেন। তবে বির্তকের বিষয়বস্তুটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠানে বির্তকের বিষয়টি অন্য কিছু হতো পারবো। আমরা মাদক মাদক বলে যতোই বক্তব্য রাখবো বিষয়টি এমন হবে ‘পাগলারে সাক্কু নাড়া দিছ না’। এখানে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন নিয়ে তর্ক-বির্তক হতে পারতো। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন সম্পর্কিত, শীতলক্ষ্যা সেতু, শান্তিরচরে নীটপল্লী, বা শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ অন্যান্য শিক্ষনীয় বিষয়ের উপর বির্তকের আয়োজন করা যেত। কিন্তু স্কুলের কোমলমতী শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বির্তকের বিষয়বস্তু এটা উচিত হয়নি। আমি সকলের প্রতি আহবান রাখবো যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বিষয় নিয়ে কোন প্রতিযোগীতার আয়োজন না করা হয়। এতে করে হিতে-বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে, যাকে বলে এমনিতে নাচনি বুড়ি তার উপর আবার ঢোলের বাড়ি।

বির্তক প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার প্রতিযোগীদের উপস্থাপনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যারা প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছে তাদের প্রত্যেকের উপস্থাপন অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে। ঢাকার যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের থেকে কোন অংশ কম নয়। তাই তাদের কাউকের পরাজিত বলা যাবে না। অংশ নেওয়া ৬জন শিক্ষার্থীই বিজয়ী হয়েছে এবং প্রত্যেকেই ১টি করে মোট ৬টি ল্যাপটপ পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন এমপি সেলিম ওসমান।

ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম তাদের বক্তব্যে, নিজ অর্থায়নে হালুয়াপাড়া এবং বাগদোবাড়িয়া’র মত প্রত্যন্ত এলাকা দুটিতে শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় নামে আধুনিক দুটি স্কুল নির্মাণ করে উক্ত এলাকার সন্তানদের উজ্জল ভবিষ্যত গড়তে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেওয়ায় এমপি সেলিম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ডে পাশে থেকে সার্বিক সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।