‘দিনমজুর থে‌কে ভয়ঙ্কর কো‌টিপ‌তি গেসু’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কাঠেরপুল এলাকার কালু ড্রাইভারের ছেলে গিয়াসউদ্দিন। ওই এলাকার লোকজন গিয়াসউদ্দিনকে ‘গেসু’ হিসেবে চিনতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তিনি ইটের ভাটায় কাজ করতেন। ৬ ভাই থাকতেন বাবার রেখে যাওয়া খুবই ছোট্ট একটি টিনের বাড়িতে। অতি সাধারণ জীবন যাপনও করতেন। মাত্র আড়াই যুগের মাথায় একসময়ের ইট ভাটার ঘানি দেওয়া সেই গেসুই এখন বনে গেছেন কোটিপতি। তবে, এলাকায় সেই কোটিপতি আরেক নাম ভয়ঙ্কর কোটিপতি। রয়েছে বিশাল বাহিনী। জুট সন্ত্রাস, জমি দখল থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যা এই বাহিনী করে না।


কুতুবআইল, রামারবাগ, কাঠেরপুল এলাকায় সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে গেসু ও আজমতের উত্থনের অজানা কাহিনী জানাগেছে।

এলাকাবাসী জানায়, ফতুল্লায় গার্মেন্টস সেক্টর চালু হওয়ার আগে (আশির দশকে) ইট ভাটার ঘানি দিয়েছেন গিয়াসউদ্দিন। নব্বইয়ের দশকে এই গিয়াসউদ্দিনই মাত্র ৭‘শ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন হাকিম সাহেব নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ডাইংকে। ওই সময় পরিচয় হয় সোলাইমান নামের এক যুবকের সাথে। সোলাইমানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গেসু গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকায় তাঁর বাহিনী পরিচিতি পায় ‘কাইল্যা গেসু বাহিনী’ নামে। পরবর্তীতে জোর খাটিয়ে সেই ড্রাইংয়ের মালিকানাই নিয়েই নেন গেসু। বন্ধুত্বের খাতিরে সোলাইমানের সাথে হয়ে যান ব্যবসায়ীক পার্টনার। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে সক্ষতা গড়ে তুলেন জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সাথে। নিজের নামের সাথে যুক্ত হয় রাজনৈতিক পরিচয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সন্ত্রাসী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে গেসু গড়ে তোলেন বিভিন্ন ব্যবসা। এক পর্যায়ে হত্যা হয় তার ব্যবসায়ীক পার্টনার সোলাইমানও। এ হত্যায় কারো কিছু না হলেও লাভের অংশটা যায় ‘কাইল্যা গেসু’র ঘরেই। এরপর গেসুর ব্যবসায় যুক্ত হয় আপন ছোট ভাই আজমত আলী। লোকমুখে শুনা যায়- সোলাইমান হত্যার পিছনেও গিয়াস উদ্দিনের হাত রয়েছে। সেই সময় সোলাইমান হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিলো, তারাও এখন গিয়াসউদ্দিন ওরুফে কাইল্যা গেসুর ছত্রছায়ায় চলেন।

স্থানীয়রা জানান, কাঠেরপুল, রামারবাগ, ফতুল্লা, নামাপাড়া, লালখাসহ আশপাশের এলাকায়জুট সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা—এসব কাজে গিয়াসউদ্দিনের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে ওঠে। কেউ কিছু বলার সাহস টুকুও পায় না। একবার আজমত- গিসুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ওই এলাকারই জব্বার সরদারের নাতি জুয়েলকে হত্যা করে গেসু আজমত গ্রুপের সদস্যরা। এছাড়া ওই অঞ্চলের মানুষ গুলোকে প্রতিনিয়ত মারধর, নির্যাতনের ঘটনাতো আছেই।

এলাকার প্রবীনরা জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাংসদ শামীম ওসমানের একজন ঘনিষ্ঠজনের সুদৃষ্টিতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এরপর থেকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি গেসুর। ভূমিদস্যুতা থেকে শুরু করে একের পর এক অপকর্ম করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আত্মগোপনে চলে যান গেসু। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এলাকায় ফিরে তৎকালীন সাংসদ সাহারা বেগম করবী ছত্রছায়ায় শুরু করেন অপরাধ জগতের রাম রাজত্ব।
কুতুবআইল, রামারবাগ, কাঠেরপুলসহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রনে নেন গেসু। এরই মধ্যে তার ভাই আজমত আলীর সাথে পারাবারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব এতোটাই ছিলে যে, এক ভাই অপর ভাইকে হত্যার করার পরিস্থিত তৈরী হয়। পরবর্তিতে সাংসদ শামীম ওসমানের ঐ ঘনিষ্ঠজন দুই ভাইকে মিলিয়ে দেন। এরপর থেকে দুই জনে জোটবদ্ধ হয়েই ঝুট সেক্টর, জমি দখল থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ২০১৪ সালে পুনরায় আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেও পরিবর্তন হয় স্থানীয় সাংসদের। তাই নতুন করে সাংসদ শামীম ওসমানের সুদৃষ্টি লাভে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিশাল বিশাল শো-ডাউন করেন গেসু ও তার ভাই আজমত। এবং সফলও হন তারা। এরপরই আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে গেসু ও আজমত বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ গেসু ও আজমত বাহিনীর হামলায় অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়েছেন।

এবিষয়ে গেসুর নাম্বারে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া । তবে তার ভাই আজমতের কাছে এলাকবাসীর অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে প্রথমেই সব বিষয়ে অস্বীকার করে জানান, আমার ব্যাপারে কেউ বলতে পারবে না আমি কাউকে কোন দিন একটা চড় মেরেছি। যত রকম অভিযোগ করা হয়েছে সব মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোন অভিযোগের প্রমান কেউ দিতে পারবে না।

 

পূর্বের নিউজ পড়তে ক্লিক করুন

মানবতা পরাজিত গেসু-আজমত বা‌হিনীর নারকীয়তায়, শিশু থে‌কে বৃ‌দ্ধ এখনও আত‌ঙ্কে