দ্বিতীয় দিনের মতো মডেল-অন্তিমের শ্রমিক বিক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘যারা আমাদের পয়সায় বাঁচে-চলে তারাই আবার আমাদের উপর অত্যাচার করে। কেন না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের, কেন ন্যায্য পাওনা পাবো না?’

অশ্রু ভেজা চেহারা, কাঁদো কাঁদো গলায় কথাগুলো বলছিলেন অন্তিম গার্মেন্টস এর শ্রমিক প্রিয়া।

রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীতে শ্রমিক বিক্ষোভে এসব কথা বলেন তিনি। দুপুর থেকে নগরীর ২নং রেল গেইটে আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসের সামনে জড় হতে থাকে অন্তিম নিটিং, ডাইং এন্ড ফিনিশিং লি. ও মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডা. লি. গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। পরে একতাবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এসে মিছিল শেষ হয়।

মিছিলের পর শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে শ্রমিকরা মালিকদের প্রতি ক্ষোভ এবং প্রশাসনের প্রতি সুবিচারের দাবি করে। সেইসাথে শ্রমিক নেতারা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ জেলার গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম শরিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, গাবতলী শাখার সভাপতি হাসনাত কবির, রূপগঞ্জ থানার সভাপতি সোহেল, রুপগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মিঠুসহ মডেল ও অন্তিম গার্মেন্টসের প্রায় কয়েক শতাধিক শ্রমিক।

এসময় মডেল গার্মেন্টসের শ্রমিক রাজীব বলেন, আমরা আমাদের শ্রমিক নেতাদেরকে নিয়ে লিখিত ভাবে দাবি পেশ করেছি স্যারদের কাছে। আশা করি তারা আমাদের দাবিগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।

অন্তিম গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে রূপগঞ্জ থানা গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলার দপ্তর সম্পাদক মিঠু বলেন, আমরা সরকারের কাছে শ্রমিকদের বেতন ১৮ হাজার টাকা দাবি করেছিলাম, সরকার ৮ হাজার টাকা করেছে। এই বেতনও গার্মেন্টস মালিকরা দেয় না। শ্রমিকদের টাকা মেরে খেয়ে অন্তিম গার্মেন্টস’র রাজা (মালিক) আকবর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকরা বাকির দোকানদারদের কাছে বাকি পায় না, বাড়ির মালিকরা বাসা হতে বের করে দেয়।

এসময় রূপগঞ্জ থানা গামেন্টস শ্রমিকের সভাপতি সোহেল বলেন, আমরা এসপি সাহেবের কাছে শ্রমিকদের কথা তুলে ধরেছিলাম। এসপি অন্তিমের মালিক আকবরের কথা মেনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের টিয়ারসেল নিক্ষেপ, লাঠি পেটা করেছে। এসবের জন্য যে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার জন্য দায়ি থাকবেন আপনারা।

শ্রমিকদের অবদান স্মরণ করিয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫২ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, এমনকি এ দেশ স্বাধীন করতে শ্রমিকদের অবদান ছিলো অতুলনীয়। তাদের কারণে দেশ উন্নয়ন হয়, সরকার উন্নয়নের মেসেজ মানুষকে দেয়। আর সেই শ্রমিকদের কথা শুনবেন না, শুনছেন চোর গার্মেন্টস মালিকদের কথা। মডেল গার্মেন্টস’র মালিক ১০ হাজার শ্রমিক দিয়ে কাঁজ করিয়ে ১ হাজার শ্রমিককে অধিকার হতে বঞ্চিত করবেন, তা তো হবে না।

সেই সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি সেলিম মাহমুদ বলেন, মডেল গার্মেন্টস মালিককে বলতে চাই সরকার যে আইন করেছে শ্রমিকদের জন্য অন্তত সেই আইন মোতাবেক শ্রমিকদের মজুরি, বেতন-ভাতা এবং যাবতীয় সুবিধাগুলো প্রদান করুন। তারপর শ্রমিকরা আন্দোলন করলেও তাদের দাবি মানছেন না। উল্টো ছাটাই, সন্ত্রাসী হামলা ও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন। অন্তিমের শ্রমিকরদের দাবি মালিক না মেনে, বেতন-ভাতা দেওয়া বন্ধ করে আইনের বহির্ভূত কাজ করছে। প্রশাসন তা না দেখে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

এসময় জেলার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব বলেন, আমরা অন্তিম এবং মডেল গার্মেন্টসের দবিগুলো নিয়ে এসপি, ডিসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, শ্রম অধিদপ্তর, বিকেএমই এর কাছে লিখিত আকারে দাবি জানিয়ে এসেছি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে শ্রমিকদের এসব দাবি আদায়ে আপনারা সহযোগীতা করুন। মডেল গার্মেন্টস এর দাবি- পিছ রেট শ্রমিকদের ৩ নং গ্রেড এর মজুরির সাথে সমহারে পিস রেট বৃদ্ধি সহ ১৩ দফা, শ্রমিক ছাটাই, নির্যাতন বন্ধ এবং অন্তিমের দাবি ২ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা, অবৈধ ভাবে অন্তিম গার্মেন্টস বন্ধ কারখানা অবিলম্বে চালু করা ইত্যাদি।

তিনি আরো বলেন, এসব দাবি না মানা হলে যে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার জন্য দায়ি থাকবেন আপনারা। আমরা তবুও আইন মেনে শান্তি প্রক্রিয়ায় আমাদের দাবিগুলো আদায়ের সংগ্রাম করে যাবো। দাবি আদায়ের সংগ্রামে যদি আমাদের মৃত্যুও হয় তবুও আমরা পিছপা হবো না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments