লাইভ নারায়ণগঞ্জ: জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য ও গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার এবং ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সোমবার (৮ আগস্ট) বিকাল ৫ টায় চাষাড়াস্থ নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বামজোটের জেলার সমন্বয়ক ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আজ্বায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, সেলিম মাহমুদ, ইকবাল হোসেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমে এসেছে তখন আমাদের সরকার রেকর্ড পরিমান তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ৪৭% বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের সময়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিত্যপণ্যের মূল্য আরও অনেক বাড়িয়ে দেবে। কৃষি উৎপাদন ব্যয়ও অনেক বাড়বে। ইতোমধ্যে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। বিপিসি গত ৮ বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। গত কিছুকাল তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি থাকায় সরকার লোকসানের কথা বলে এ দাম বৃদ্ধি করল। দাম বৃদ্ধি করার কারণ হিসাবে ভারতে তেল পাচারের কথাও বলেছে। ভারতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দাম সমন্বয় করে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় ভারতেও দাম কমে যাচ্ছে। এখানে পাচারের কথা বলা দাম বৃদ্ধির একটি অজুহাত মাত্র। ক্রুড অয়েলের দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ৯৪ ডলারে নেমে এসেছে। এটা আরও কমবে। তেল থেকে সরকার শতকরা ৩২ টাকা কর নেয়। বিপিসির বিগত দিনের বিপুলৎ পরিমান লাভ বিবেচনায় নিয়ে এবং কর কমিয়ে সরকার জনজীবনের বিপর্যয়ের কথা বিবেচনায় তেলের দাম না বাড়ালেও পারত। পেট্রোল এবং অকটেন দেশে উৎপাদন হয়। এর দাম বৃদ্ধির আসলে যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। শোনা যাচ্ছে আইএমএফ-এর শর্তপূরণের জন্যই এক লাফে এ মূল্য বৃদ্ধি করা হল। দেশের শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়েনি, মধ্যবিত্তের আয় বাড়েনি, জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয় পরিবহনের নৈরাজ্য। গতকাল সরকার দূরপাল্লার বাসে ২২.২২% এবং নগরে ১৬.২৭% ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। পরিবহন মালিকদের কাছে সরকার- প্রশাসনকে সবসময়ই নমনীয় দেখা যায়। বিভিন্ন রুটগুলিতে বাস মালিকরা স্বেচ্ছাচারীভাবে অনেক বেশি পরিমাণে ভাড়া আদায় করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে গতকাল মালিকরা ৪৫ টাকার ভাড়া ৪৪.৪৪% বাড়িয়ে ৬৫ টাকা আদায় করেছে। আজ তারা ৬০ টাকা আদায় করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ১৮.৫ কিলোমিটারের রাস্তায় সরকার ঘোষিত ভাড়া ৫০ টাকার অধিক হতে পারে না। গতকাল ঢাকা, লক্ষীপুর, বরিশালসহ অনেকগুলো জেলায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশি ও সরকার দলীয় গুন্ডাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। দমন পীড়নের পথে সরকার জনগণের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন বন্ধ করতে চায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে। এসরকার একবার বিনা ভোটে এবং একবার রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। গণবিচ্ছিন্ন সরকার লুটপাটকারী, দূর্নীতিবাজদের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তাই জ্বালানি খাতের দূর্নীতি-অনিয়ম দূর না করে দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর বোঝা চাপিয়ে দূর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদেরই রক্ষা করল। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জ্বালানি তেলের ও পরিবহনের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলাকারী পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করেন।