স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বাড়ির উঠান, মাঠঘাট কিংবা সড়কের দুই পাশ। চারদিকে ফুল আর ফুল। গাঁদা, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস, চেরি, ক্যালেনডোলা, স্টার, জিপসি-আরও কত নাম। খেতে খেতে ব্যস্ত চাষি-শ্রমিকেরা। এক দল ফুল তুলছে, আরেক দল মালা গাঁথছেন। কথা বলার ফুরসত নেই কারও।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কলাগাছিয়া ইউনিয়নের দিঘলদী, সাবদী ও মাধবপাশা এলাকায় গিয়ে এই চিত্র চোখে পড়ে। ‘বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’-এই তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কলাগাছিয়ার ফুলচাষিরা। সময়মতো যাতে ফুল তুলতে এবং পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন তা নিয়ে এখন তারা ব্যস্ত।
স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে ভ্যালেন্টাইন ডেতে ফুল বিক্রি বেশি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরা ও দাম ভালো পাবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বন্দর উপজেলা কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ২০১১ সালে ৩৫ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। এরপর থেকে ফুলের চাষ বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১১৫ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছিলো।
সবচেয়ে বেশি ফসল ছেড়ে ফুলের চাষে ঝুঁকেছেন কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মাধবপাশা, সাবদী, দিঘলদী, নৃশং, মোহনপুর, কলাবাগ, জিওধরা, আদমপুর, নয়ানগর ও মুকফুলদী এলাকায়। একইভাবে বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ী, মীরকুন্ডি, বাগবাড়ী, কুশিয়ারা ও তিনগাঁও; মুসাপুরের কুলচরিত্র, মিনারবাড়ী ও চর ইসলামপুর; ধামগড় ইউনিয়নের নয়ামাটি ও মনারবাড়ী; উপজেলা শহরের শান্তিনগর, মদনগঞ্জ, মাহমুদনগরেও ফুল চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি দপ্তর ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফসলের চেয়ে ফুলে আয় বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে লোকজন ফুল চাষে ঝুঁকছেন। তবে ফুল চাষে পরিশ্রম খুব বেশি বলেও জানিয়েছে চাষিরা। দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে প্রতিদিন বাজারে ফুল নিতে হয় বলে ফুরসত থাকে না। আবার প্রতিদিন বিক্রি থাকে বলে নগদ টাকার প্রবাহই কৃষকদের পরিশ্রমে উৎসাহ জোগায়।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিঘলদী গ্রামের সুবোধ চন্দ্র হালদার প্রায় ৩৩ বছর আগে বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। প্রতিদিন অল্পস্বল্প ফুল এনে বিক্রি করতেন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ফটকে। তিনিই এলাকার বেশ কয়েকজনকে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেন।ফুল চাষের মাধ্যমে খেয়ে-পরে ভালো থাকায় অন্যরাও এগিয়ে আসেন এ ব্যবসায়।
স্থানিয় এক চাষি বলেন, আগে গম, ধান, সরিষা, আখ চাষ করতেন। ধান চাষ করে অনেক সময় খরচই উঠত না। প্রায় ২৫ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন তিনি। এখন প্রতিদিন ট্রাকভর্তি ফুল নিয়ে শাহবাগে গিয়ে বিক্রি করেন। ৫০ বিঘা জমিতে সারা বছরই নানা রকম ফুলের চাষ করেন। নিজের দুই বিঘা জমি ছিল। লাভের টাকায় ৪০ শতাংশ জমি কিনেছেন। বাড়িতে ছনের ঘর ছিল। এখন চৌচালা ঘর করেছেন। ফুলের বীজ রাখার জন্য করেছেন আলাদা ঘর।
বন্দর উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন অন্য ফসলের তুলনায় অন্তত বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলার অনেক কৃষক ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমাদের কাছে ১৪০ জন ফুল চাষির তালিকা রয়েছে। লাভ জনক হওয়ায় আমরাও তাদের চাষাবাদের পাশাপাশি মাকের্টিং সর্ম্পকেও টেনিং করাচ্ছি।
সম্প্রতি কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান বলেন, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় আড়াই শ ফুলচাষি আছেন। বাগানে শ্রমিকের কাজ করা, মালা গাঁথা, ফুল পরিবহনসহ বিভিন্নভাবে ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখন ফুল চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ ভাগ বাড়িতে কোনো না কোনো ফুলগাছ আছে বলে জানান তিনি।