‘ভাতা চাই না, সম্মানটুকু ফেরত দেন’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘আমাদের কোন অভাব নেই। সরকারের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা কিংবা ভাতা চাই না। আমার বাবার প্রাপ্য সম্মানটুকু ফেরত চাই। জীবনবাজি রেখে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু জীবদ্দশায় মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি। অনেক চেষ্টা করেছি বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছি, বাবার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায় করতে পরিনি। মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পেয়ে আক্ষেপ নিয়েই বাবা চলে গেলেন পরকালে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এমনটি মেনে নিতে পারছি না।’

বৃহম্পতিবার (২১ মার্চ) প্রতিবেদকের নিকট কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান দেলপাড়া এলাকার মো: রফিকুল ইসলাম আশরাফীর পুত্র রুহুল আমিন আশরাফী। ২০১৯ সনের ১৮ মার্চ সকালে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম আশরাফী ইন্তেকাল করেন।

রুহুল আমিন বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় মর্যদায় তার দাফন হয়নি। এটা আমাদের পরিবারের চিরদিন আক্ষেপ থেকে যাবে। সরকারের কাছে আমরা ভাতা চাই না। মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে আমার বাবার মরনোত্তর সম্মানটুকু দিন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বৃহৎ ইউনিয়ন পরিষদ কুতুবপুরের প্রথম চেয়ারম্যানে নির্বাচিত হন মো: রফিকুল ইসলাম আশরাফী। এছাড়া তিনি ঐ ইউনিয়নের আরো দুই দফা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য, ২৩ বছর ঐ স্কুলের সভাপতি ছিলেন । তিনি দেলপাড়া করবস্থানের আধুনিকরনসহ ঈদগাহের সূচনা করেন। এছাড়া কুতুবপুর ইউনিয়নের সিংহভাগ রাস্তা তিনি নিজে নির্মাণ করেন।

রফিকুল ইসলাম আশরাফী ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতের মেলাঘরে প্রশিক্ষণ শেষে জীবনবাজি রেখে ২নং সেক্টরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় । ২ নং সেক্টর তিনি তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা । যার নং ২১৬৯৫০। নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ও সাংসদ সেলিম ওসমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো: রফিকুল ইসলাম আশরাফীকে সনাক্ত করেন। এছাড়া যুদ্ধকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমাইল মিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো: রফিকুল ইসলাম আশরাফীকে সনাক্ত করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার প্রত্যাশা ছিল সরকার তাকে স্বীকৃতি দিবে। এরপর স্বীকৃতি না পেয়েই মৃত্যুবরণ করলেন এ মুক্তিযোদ্ধা।