স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শহরের টানবাজারে আরজু বেগম(৪৫) নামের এক মহিলাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি দক্ষিণ র্যালি বাগানের মো. আক্তারের স্ত্রী ও মাদক নির্মূল কমিটির এক সদস্য। তার মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন পুলিশ।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেল পাঁচটার দিকে টানবাজার দক্ষিণ র্যালি বাগানে এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় মাদক বিরোধী সভা চলছিল। সভায় হামলা চালিয়ে ওই হত্যা করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
আরজু বেগমকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে তার পরিবার থেকে। এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অ্যাডভোকেট হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা ও সর বানুসহ ৫জনকে আটক করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ।
তবে, তাদের আটক করার সময় পুলিশের সাথে সামান্য ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে অভিযুক্তদের শেল্টারে থাকা মাদকের ডিলার বিল্লাল বাহিনীর। তারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, র্যালী বাগান এলাকাটি ছিলো মাদকের হাট। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি মাদক নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির একজন সদস্য হলেন আরজু বেগম। কমিটির তৎপরতায় বাগন থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত, গ্রেফতার ও অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় ইতোপূর্বে।
সূত্র বলছে, বছর দুই আগে র্যালি বাগান এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার মণ গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার বাদল ও ফরিদকে গ্রেফতার করে। এদেরকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন অ্যাডভোকেট হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা। কিন্তু মাদক নির্মূল কমিটি তাদেরকে বাগানে অবাঞ্চিত ঘোষণা করায় তারা কেউ আর এখানে ঢুকতে পারেনি। তবে, তাদের অ্যাডভোকেট হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা বাদল ও ফরিদকে বাগানে পুনরায় পুনর্বাসন করতে উঠে পড়ে লাগেন।
স্থানীয়রা আরও জানায়, এই এলাকার সমস্ত মাদক ব্যবসায়ীদের জামিনে ছাড়িয়ে আনার কাজটিই করে থাকেন অ্যাড. হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড. আসমা। তাদের সাথে সহযোগিতা করেন তাদের আরেক বোন হোসনা। মূলত এ নিয়েই মাদক নির্মূল কমিটির সাথে তাদের দ্বন্দ্ব চলছিলো। আর এই দ্বন্দ্বের জের ধরে এদিন মাদক নির্মূল কমিটির সভাতে তারা স্বদল বলে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারী হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা, সর বানুসহ তাদের লোকজন আরজু বেগমকে আটকে গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এদিকে খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের সাথে বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন অভিযুক্তদের লোকজন। পুলিশ তাদেরকে আটকের চেষ্টা করলে তারা এতে বাধা দেন। এসময় ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এর মধ্য দিয়ে পুলিশ হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা, সর বানুসহ ৫ জনকে আটক করে।
অপরদিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে এতে বাধা দেয় মাদক নির্মূল কমিটির লোকজন। তারা মরদেহটি পুজি করে বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নেন। তবে, পুলিশ তাদেরকে নিবৃত করে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় আরজু বেগম নামে একজন নারী বৈদ্যুতিক শকে নিহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে, তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে, এটি হত্যাকান্ড নাকি দুর্ঘটনা তা ময়না তদন্তের রির্পোট ও তদন্ত শেষে বলা যাবে।