স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আলোচিত সাংসদ একে এম শামীম ওসমানসহ তার ঘনিষ্টজনরাই আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে। ঐক্যফ্রন্ট্রের ৫ প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন মহাজোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে তিনজন এবং লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিত হন দুুইজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শামীম ওসমানের আপন ভাই একে এম সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসন থেকে নির্বাচিত হয়। সেলিম ওসমান রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়িদের সংগঠন বিকেএমই’র সভাপতি। নির্বাচনের আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ভাইয়ের(সেলিম ওসমানের )জন্য ভোট চাইতে বন্দর একটি নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমান। সেখানে তিনি আবারো সেলিম ওসমানকে জয়ী করার জন্য ভোটারদের বলেন।
সেলিম ওসমান দশম সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে এবার তিনি ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক এস এস আকরামকে পরাজিত করেন। এস এম আকরাম আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক ঐক্যে যোগ দেন। নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমান লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৮৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এসএম আকরাম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫১ হাজার ৯৮৬ ভোট।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্টবন্ধু লিয়াকত হোসনে খোকা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে। খোকা এবং শামীম ওসমান দুইজনেই এক সাথে বেড়ে উঠা। সরকারী তোলারাম কলেজে একই সাথে পড়াশুনা করেন তারা। নিবাচনের আগে ১৭ ডিসেম্বর সোনারগাঁয়ে একটি নির্বাচনি জনসভায় লিয়াকত হোসেন খোকার জন্য ভোট চান শামীম ওসমান।
ঐ জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ভোটের দিনও তিনি বন্ধুর জন্য সোনারগাঁয়ে আসবেন। এ আসনে লিয়াকত হোসনে খোকা লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৪৭ ভোট।লিয়াকত হোসেন খোকা দশম সংসদ নির্বাচনের বিনা ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন।
শামীম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন নজরুল ইসলাম বাবু নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে সাংসদ হয়েছেন । বাবুর রাজনীতির হাতেখড়ি শামীম ওসমানের হাতে। পরে নজরুল ইসলাম বাবু কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন লিয়াকত শিকদার। একই সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নজরুল ইসলাম বাবু। নবম ও দশম সংসদে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে নজরুল ইসলাম বাবু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ১২ ভোট।
শামীম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন বীর প্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী সাংসদ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গাজী ট্যাঙ্ক, গাজী টায়ার, গাজী পাইপ ইত্যাদি আরও অনেক ব্যবসার স্বত্তাধিকারী। তিনি একজন ক্রিড়া অনুরাগি এবং পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর প্রথম নির্বাচন মগবাজার থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) থেকে সংসদ সদস্য হিসাবে জয় লাভ করেন। এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৮২ ভোট।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মনির হোসাইন কাসেমী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৫৮২ ভোট।
বিজয়ী হওয়ার পর শামীম ওসমান বলেছেন, বিএনপি যারা করেন তারা হয়তো ভাবছেন আমরা আবার নির্বাচিত হয়েছি। যার ফলে তাদের জন্য খারাপ দিন এসে গেছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, নির্বাচন হয়ে গেছে। আমরা যারা রাজনীতি করি আমরা সবাইকে সম্মান করবো।
তিনি বলেন, আমরা যখন রাজপথে যাব আমাদের নেতাকর্মীরা যেমন থাকবেন অন্যদলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা একই রকম থাকবেন। আমরা কাউকে আঘাত করবো না। বরং আমরা চেষ্টা করবো কাজ করে তাদের আমাদের পক্ষে নিয়ে আসার।
বিরোধী নেতাকর্মীদের কেউ কিছু বলবেন না। বিরোধীতা যারা করেছেন তারা যদি কোনো কটু কথা বলে থাকে তাহলে আমরা তাদের ক্ষমা করে বুকে টেনে নেবো । আমাদের টার্গেট থাকবে তাদের মনটাকে জয় করে নেয়া।
শামীম ওসমান বলেন, আমি ওয়াদা করছি নারায়ণগঞ্জকে এমনভাবে সাজাবো যাতে দেশবাসী তাকিয়ে থাকবে। আল্লাহর যদি হুকুম হয় তাহলে আমি আগামী বছর ২০১৯ সালের প্রথম তিন চার মাসের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আনবো ইনশাআল্লাহ। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।