শিশু সাকি অপহরণে আসছে নতুন নতুন তথ্য, পিতার বক্তব্য তদন্ত করবে পুলিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: অপহৃত শিশু সাদমান সাকি উদ্ধার না হওয়ার ঘটনায় পুলিশকে জড়িয়ে বাবা সৈয়দ উমর খালেদ এপনের বক্তব্য তদন্ত করে দেখবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দাবি, কিসের ভিত্তিতে পুলিশকে জড়িয়ে এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

১৬ মার্চ সাকি অপহরণের ঘটনায় কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল জড়িত দাবি করে বাবা সৈয়দ উমর খালেদ এপন বলেছিলেন, প্রশাসন কিছু করতে পারবে না। তাদের কাছে গেলে বলে, ‘ওরা (অপহরণকারী) শামীম ওসমানের লোক, আমাদের পক্ষে সম্ভব না। উপরের কিছু নির্দেশনার ব্যাপার আছে।’

তার এমন বক্তব্যে পুলিশ প্রশাসনে ভাবমূর্তি নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়। তাহলে কী পুলিশ ক্ষমত্ধরদের বিরুদ্ধে অসহায়! তবে, জেলা পুলিশ বলছেন ‘সাকির বাবার দাবি ভিত্তিহীন’

এদিকে, লাইভ নারায়ণগঞ্জ থেকে শিশু সাকির পিতা এপনে এর কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘কোন পুলিশ কর্মকর্তা এ কথা বলেছে’। এমন প্রশ্নের পরিস্কার উত্তর দিতে পারেনি ওই পিতা। সৈয়দ উমর খালেদ এপন বলেন, এটাতো শুরু থেকেই মনে হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত এমনটা হচ্ছেও। আমার ছেলেটাকে উদ্ধার করতে হবে। তাই তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আর পুলিশের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে। এখনও পুলিশের প্রতি আমার আস্থা আছে, তারা কিছু একটা করবে।

অপহৃত শিশুর পিতার এমন অভিযোগ নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম বলেন, ‘এ ধরণের কথা ভিত্তিহীন। প্রশাসনের প্রতি কারো চাপ নেই। প্রশাসন তাদের নিজ গতিতে কাজ করছে। ’

মামলা ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুরে অপহরণ হয় দেড় বছরের শিশু সাদমান সাকি। ওই দিন রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করে সাকির বাবা। ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় জিল্লুর রহমান ও আব্দুর রহমান তপন নামের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তথ্য প্রমান না থাকায় জামিনে মুক্তি পায় আসামীরা। এদিকে এ ঘটনার কিছু দিনের মাথাতেই মামলার দায়িত্ব নেয় পিআইবি। এছাড়া সাকিকে উদ্ধারের জন্য র‌্যাবের কাছেও একটি আবেদন করেছে পরিবারের সদস্যরা।

অন্যদিকে এ ঘটনার প্রায় ১৪মাস বিষয়টি নিশ্চুপ ছিল। নতুন করে আলোচনায় আসে, ১৬মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ ঘটনায় এক কাউন্সিলর জড়িতের অভিযোগ করে মানব বন্ধন করায়। মানববন্ধনের পরের দিন (১৭ মার্চ) সংবাদ সম্মেলন করে হোসেয়ারী সমিতি ওই কাউন্সিলর পক্ষ নিয়ে। এর পরের দিন (১৮মার্চ) কাউন্সিলর নিজে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। নিজের অবস্থান পরিস্কার করে ওই দিন। দাবি করেন, এ অপহরণে সাকির চাচা জড়িত।

অপর দিকে (১৯মার্চ) একটি নিউজ পোর্টাল নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রচার করে। যেখানে ওই কর্মকর্তার আলোচনায় উঠে আসে সাকি অপহরণের পরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, শিশু সাকি অপহরণের ঘটনায় পিতা এপন এর ভাই সৈয়দ সাদিম আহমেদকে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করার এক পর্যায়ে মামলার বাদী এপন পুলিশকে জানান, ‘আমার ছেলে হারাইছি এখন আর ভাইকে হারাতে চাই না ।’ এপনের এমন জোড়াজুড়িতে তৎকালীন সময়ের সদর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে হাতের নাগালে অপহরণকারীকে পেয়েও ছেড়ে দিতে হয়েছে বাদীর আপত্তির কারণে । এক্ষেত্রে পুলিশ অথবা অন্য কাউকে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নাই মামলার বাদী এপনের ।

এদিকে এপনের বক্তব্য নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, একটি অপহরণ মামলার আসামীকে ছেড়ে দিবো; আমরা এমন পুলিশিং করি না। এছাড়া এপন যেহেতু ভিকটিমের বাবা, তিনি শোক থেকে এমন কথা বলতেও পারেন। তাই আইনী ব্যবস্থা না নিলেও কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলছে, সেটা তদন্ত করে দেখবো।