স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নিজ বাড়ি থেকে শিশু সাদমান সাকিকে অপহরণের ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। শিশুটিকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্ধেহের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আপন চাচা সাদিল নামের এক ব্যক্তির নাম।
সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল একথা জানান।
তার ভাষ্য মতে, ‘শিশুটির বাবা এপন ও চাচা সাদিলের মধ্যে বিবাদ চলছিলো। ওই সময় চাচা সাদিলের ঘর থেকে ৫ লাখ টাকা চুরি হয়। আমার মনে হয়, ওই ৫ লাখ টাকার জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের পর মুক্তিপন হিসেবে ৫ লাখ টাকা চাওয়াও হয়েছিলো। যে নম্বর থেকে টাকা চাওয়া হয়, সেই নম্বর ট্রেক করে গ্রেপ্তার হওয়া আসামীর জবানবন্দীতে সাদিলের নাম উঠে আসে। পরে সাদিলকে গ্রেপ্তার করা হলে শিশুটির বাবা এপনই মুক্ত করে এনেছে।’
এদিকে গত ১৬ মার্চ এক মানববন্ধনে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলকে শিশু সাদমান সাকি অপহরণের সাথে জড়িত দাবি করে এপন বলেছিলেন, ‘সাকিকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রশাসন কিছু করতে পারবে না। তাদের কাছে গেলে বলে, ওরা শামীম ওসমানের লোক, আমাদের পক্ষে সম্ভব না। উপরের কিছু নির্দেশনার ব্যাপার আছে।’
তবে শিশুটির বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপনের এ বক্তব্য মিথ্যে দাবি করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘এ ধরণের কথা ভিত্তিহীন। প্রশাসনের প্রতি কারো চাপ নেই। প্রশাসন তাদের নিজ গতিতে কাজ করছে।’
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় দেড় বছরের শিশু সাদমান সাকি। এঘটনায় শিশুটির বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপন বাদি হয়ে ১৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় শিশু নির্যাতন ও দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই সময় মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে ছিলো থানার এসআই মো. রুস্তম আলী। পরে এসআই শামীম হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছুদিন পর মামলাটি ভালো ভাবে তদন্তের জন্য চলে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনে (পিবিআই)। সেখানে তদন্তের দায়িত্ব নেয় আশরাফুল আলম। বর্তমানে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ দেখছেন। মামলার এই দীর্ঘ সময়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করলেও তারা স্বাক্ষ প্রমানের অভাবে জামিনে রয়েছে।
এদিকে মামলার সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই শামীম হোসেনের এক আলাপচারিতার অডিওর ভাষ্য মতে, সাদমান সাকিকে অপহরণের পর মুক্তিপন হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবির সাথে শিশুটির চাচা সাদিল নামের এক ব্যক্তি জড়িত ছিলো। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করলে মামলার বাদির কথায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে নাজমুল আলম সজল এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রশ্ন আসে না।
এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল জানান, শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কোন স্বাক্ষিও আমার নাম বলেনি, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও আমার নাম বলেনি। তাহলে ১০ মাস পরে কোন স্বার্থে? কার নির্দেশনায় আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা ৪ ভাই রাজনীতি করি, আমাদের কারো কোন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার রেকট নেই। আমার বিশ্বাস আমার দলকে ছোট করার জন্য, দলের নেতাকর্মীদের ছোট করার জন্য, কোন একটা জোট মিশন নিয়ে নেমেছে। তারা যে কোন হত্যাকা-ই মানববন্ধনের ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জে এখন এমন অবস্থা তৈরি করেছে, একটি কুকুর মারা গেলেও বলে ওসমান পরিবার মেরেছে । আমি প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো, আপনারা দৃষ্টি রাখবেন কারো বিরুদ্ধে কেউ বক্তব্য রাখলে সেটা যেন তথ্য ও প্রমান সহকারে বক্তব্য রাখে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের সাথে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদি শিশুটির বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপনের চাচাত ভাই দিনার মাহমুদ, ফয়সাল ও সুনয়ন সুমন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান লিটন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়াত আলম সানি, হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা সাঈদ সোহেলসহ আরো অনেকে।