স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জ গরশ ও জনপদের প্রায় ৫০ কোট সরকারি সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জের পারিজাত সিটি মার্কেট এলাকার আলী আকবরের পুত্র মো: ইউসুফ এ অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া সরকারি এ সম্পত্তি দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধারের জন্য এর আগেও দুদক ভূমি মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার না হওয়ায় ঐ দখলদার আশ্বে পাশ্বের নিরীহ মানুষের জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদকে লিখিত অভিযোগে মো: ইউসুফ জানান, সাইনবোর্ড সংলগ্ন ডগাইর মৌজার ১৬৬৫ দাগের ৬৩ শতাংশ জমি আব্দুল মান্নান ভুইয়ার নিকট থেকে ৫ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে দেখাশুনা ও আমার ব্যবসা পরিচালনা করে আসিতেছি। গত ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে রাতের আঁধারে আমার প্রতিবেশী ফজলুল কবির, মোঃ নুরে আলম, উভয় পিতা মৃত আব্দুল আজিজ, সাং মাতুয়াইল থানা- ডেমরা, জেলা- ঢাকা। আমার ভোগদখল করা জমি জোরপূর্বক দখল করার জন্য স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক দিয়ে জোরপূর্বক দেয়াল নির্মাণ করে।
তিনি জানান, আমি আমার সম্পত্তি রক্ষার জন্য ভূমি অফিস, ভূমি মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রসাশক কার্যালয়ে যোগাযোগ শুরু করি। এবং নথিপত্র তল্লাশী দিয়ে ফজলুল কবীর গংদের এক ভয়ঙ্কর দূর্নীতির তথ্য পাই। মুলত আমার প্রতিবেশী ফজুলল কবীর দূর্নীতির মাধ্যমে সড়ক ও জনপদ(সওজ) এর ডেমরা ডগাইর মৌজার ১৬৬৪ ও ১৬৬৫ দাগের ১.৭১ একর জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নেয়। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করে এবং অতিমাত্রায় লোভী হয়ে ফজলুল কবীর গং আমার সম্পত্তিও আত্মসাৎ করার পাঁয়তার করছে। বিশাল অংকের সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করার খবরটি আমি দুদককে জানানোর প্রয়োজন মনে করে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বাধ্য হই।
সরকারি নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারি এ সম্পত্তি ফজলুল কবীর গংদের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য ভুমি মন্ত্রণালয় ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে। যার স্মারক নং:ভু ম/শা-১০/হ:দ:/ডিএ-৫৬/৮৬ (অংশ).৭। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও ইতোপূর্বে সওজের উক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ভুমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি মাধ্যমে সুপারিশ করেছে। যার স্মারক নং : ০০.০১.০০০০.৫০১.০১.০৬০.১৭. তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮।
জানা যায়, সওজ ও জনপদ ১৯৬৭/৬৮ সালে এল এ কেসের ( ল্যান্ড একোয়ারের) মাধ্যমে এ জমি অধিগ্রহন করে। পরবর্তীতে এই সরকারি সম্পত্তি জনৈক শামীম মাহমুদ ও মনজুর মোর্শেদ গং দের থেকে পাওয়ার অফ এর্টনি মুলে এ জমির মালিকানা দাবী করেন জনৈক কমল সরকার গং। ২০০৯ সালে সরকারি অধিগ্রহন বাতিল করার জন্য আবেদন করে কমল সরকার গং। সওজ এ অধিগ্রহন বাতিল করে। কিন্ত ২০১০ সালে অধিগ্রহন বাতিল সংক্রান্ত আদেশ অবৈধ হওয়ায় জমিটি কমল গংদের নিকট থেকে সরকার ফেরত নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে ভুমি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে আদেশ দেয়। ২০১০ সালে শামীম মাহমুদগং সরকারের এ আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে রীট করে। যার নং ৮২০০/২০১০।
রীট চলাকালিন সময়ে ২০১১ সালে কমল সরকার গং ভুমি অফিসের কর্মকর্তাদের জোগসাজসে জালিয়াতি করে জমিটি ফজুলল কবীর গংদের নিকট বিক্রি করে। যা সম্পূর্ন অবৈধও বেআইনী । কমলসরকারগং জালজালিয়াতি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে এলে সংস্থাটি সরকারি এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ভুমি মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর সুপারিশ করে। সরকারি যে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য দুদক ও ভুমি মন্ত্রনালয় তৎপর সেখানে দিব্যি ফজলুল কবীর গং ঐ সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে চলছে।
জানা গেছে, ভুমি অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে জাল জালিয়াতির মাধ্যম্যে সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নামজারি করে নেয় ফজলুল কবীর গং। দুদক তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা। এব্যাপারে নুরে আলম জানান,কমল সরকারগংদের নিকট থেকে আমরা এ সম্পত্তি ক্রয় করেছি। এর বেশী কিছু বলতে নারাজ তিনি।