বিশ্বের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সিদ্ধিরগঞ্জে: প্রকল্প সময় বেড়েছে ৩গুণ, খরচ ২গুণ

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ২০০৯ সালে শুরু করে তিন বছরে শেষ করার কথা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার পস্নান্ট নির্মাণ’ প্রকল্পটি। কিন্তু নির্দিষ্টি সময়, অর্থাৎ ২০১১ সাল তো দূরের কথা, চারবার সময় বাড়িয়েও গত ডিসেম্বরেও শেষ হয়নি। বরং প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৪ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করতে এবারে আরো দেড় বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করতে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

দীর্ঘ সময়েও গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি কেন বাস্তবায়ন হলো না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, তাদের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রকল্প এলে তার যৌক্তিক কারণ দেখে তা যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের জন্য একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করেন। ওই প্রকল্পে অপ্রাসঙ্গিক বা অসামঞ্জস্য কিছু পরিলক্ষিত হলে তা বাদ দেয়ার কথা বলা হয়। তবে বারবার সংশোধন করেও প্রকল্পটি কেন বাস্তবায়ন হলো না তার দায় কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের। ওই বিভাগের সচিবই বলতে পারবেন দেরি হওয়ার সঠিক কারণ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ঢাকা অঞ্চলে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা এবং লোডশেডিং কমিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে একটি উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার পস্নান্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তাতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ এক হাজার ৫০২ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

তাই সিদ্ধান্ত পাল্টে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। পরে ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার পস্নান্ট নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল অনুমোদন করে সরকার। তাতে ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ বা ৪ হাজার ২৩৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ধরা হয়। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ধরা হয় এক হাজার ৮২২ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারের কোষাগারের।

জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ হচ্ছে-গ্যাস টারবাইন জেনারেটর (জিটিজি), গ্যাস বুস্টার কম্প্রেসারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, স্ট্রিম টারবাইন জেনারেটর (এসটিজি), কুলিং টাওয়ার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্নান্টসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা। এ ছাড়া গাড়ি কেনাসহ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ। তবে মাঝপথে আবার প্রকল্পটির সময় বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধনের পরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও গতি আসেনি।

চতুর্থবারের মতো ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রম্নয়ারি প্রকল্পটি আবার সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে প্রাক্কলন করা হয় ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। তাতেও তেমন কাজের কাজ হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইপিসি কাজ ফেলে পালিয়ে যায়। অপরদিকে গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

সূত্র আরও জানায়, এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। তা শেষ করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে আবারো দেড় বছর সময় চেয়েছে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্ট্রিম টারবাইনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেরামত করে আনা হলেও দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থাকায় ত্রম্নটি দেখা দিয়েছে। তবে ওই সব যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ বাকি কাজ শেষ করতে এবং ঠিকাদারের চূড়ান্ত দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দিতে লাগবে আরো দেড় বছর। এবারে ব্যয় ১৭৩ কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ সামান্য কমিয়ে ২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাকি অর্থ সরকার ব্যয় করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে জাতীয় গ্রিডে ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।