স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ : কেল্লার পাশের পচা ডোবা, নোংরা পরিবেশ আর ভেতরের অব্যবস্থাপনায় ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ দুর্গটি বিলুপ্ত পথে। কথিত আছে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত হাজীগঞ্জ এই দুর্গটি নাকি লালবাগ কেল্লার উপ কেল্লা হিসেবে ব্যবহার করা হত। যদিও কেল্লাটি এখন বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে সেটা নামে মাত্র। তবে, এবার সুখবর আসছে।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাজীগঞ্জ কেল্লা (দুর্গ) নিজেদের তত্বাবধানে নিবে এনসিসি (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন)। এর আগে অবৈধ সকল কিছু উচ্ছেদ করবে পুলিশের সহযোগীতায়। এর পর ঐ জায়গা পরিস্কার করে জনগণের ব্যবহারের সুযোগ করে দিবে এনসিসি।
শনিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে এমন ঘোষণা দেন এনসিসি’র মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
দেওভোগ দুই নং বাবুরাইলে জন কল্যাণ সংসদ এর শুভ উদ্বোধন পরবর্তী এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, হাজীগঞ্জ কেল্লা নিয়ে মামলা চলছে। আমরা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উচ্ছেদে যাবো। উচ্ছেদ বলতে পুলিশের সহযোগিতায়। মামলার রায় হয়েছে। আদালত একদম স্পষ্ট ভাবে অর্ডার দিয়েছে, ডিসি এসপি নিয়ে উচ্ছেদ করে ঐ জায়গা পরিষ্কার করে জনগণের ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দিতে।
দেওভোগ লেকের কাজের প্রসঙ্গে টেনে আইভী বলেন, এই ১৫-১৬ বছরের মধ্যে শহর, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জে প্রচুর কাজ করেছি। তবে, এই লেকের কাজটি সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ আমার মনে হয়।
তিনি আরো বলেন, এখানে মানুষ যতটুকু আরাম পাবে আমি মনেকরি পশুপাখিও আরাম পাবে। এরকম খোলামেলা পরিবেশে। পানি আছে। ফল গাছ আছে । আমি মনেকরি এটা আমাদের দেওভোগবাসীর জন্য আল্লাহর একটা রহমত।
উল্লেখ্য, সংস্কারের অভাবে এই ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লার ইটগুলো খসে পড়ছে, পুড়ো কেল্লায় কোনো আস্তর নাই। তাই কেল্লার দেওয়াল ঢাকা পড়ছে শেওলায়। দুর্গের অভ্যন্তরে এখন ব্যবহৃত হয় গৃহপালিত পশুর চারণভূমি অথবা শিশু-কিশোরদের খেলার নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে। আর যখন তখন চোখে পড়ে গাঁজাখোর হিরোইনখোরদের আড্ডা। দেখার কেউ নাই-বলে রাতের আঁধারে কেল্লা সহ এর আশেপাশে ঘটে যায় অনেক অপরাধজনিত ঘটনা।
আর দুর্গ এলাকার ব্যাপক অংশ জুড়ে এখন রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেড সদর দফতর। কেল্লাটির একপাশে রয়েছে খাল, যেই খালটি দিয়ে কোনো একসময় সেই আমলের মুগল সম্রাটরা নৌকাযোগে এই কেল্লায় আসাযাওয়া করতো, নাম ‘কিল্লার খাল’। (বহু আগে থেকে সেই খালের ওপর দিয়ে একট পুল তৈরি হয়, সেই পুলের নাম হাজীগঞ্জ কেল্লার নামেই নামকরণ করে নাম রাখা হয় ‘কিল্লার পুল’। এই পুলের ওপর দিয়েই নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রোড ও ডেমড়া যাতায়াতের একমাত্র পথ।) আর কেল্লার তিনপাশে কোনো একসময় গড়ে ওঠেছে খাসজমির ওপর পাটের গুদাম। এই গুদাম মালিকরা স্বাধীনতার পর থেকে অস্থায়ী লিজ নিয়ে তাদের সংগ্রহ করা পাট রাখার জন্য কেল্লা ঘেঁসেই গুদাম নির্মাণ করে। তখন থেকেই এসব গুদামের কারণে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লাটি সৌন্দর্য হারাতে থাকে।