স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আলীরটেক ইউনিয়নের ফিরোজা খাতুন আদর্শ মহিলা মাদ্রাসার দশম ছাত্রী পিয়া মনি। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন পড়ালেখা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবেন।
কিন্তু পিয়ার সেই ছোট বেলার লালিত স্বপ্ন পরিবারের একটি সিদ্ধান্তে ভেঙ্গে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে। গত অক্টোবর মাসে মা-বাবার দেওয়া সিদ্ধান্তে বিয়ে হয়েছে তার।
একই রকমের অবস্থা হান্নান নামের আরো ফতুল্লা এক স্কুল শিক্ষার্থীর। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি ছেলেটি। পড়া লেখা করার প্রাণপন চেষ্টার পরেও পরিবার ব্যয় বহন না করতে পারায় বাস্তবতার কাছে হেরে শেষ পর্যন্ত গার্মেন্টসে কাজ করতে হচ্ছে হান্নানের।
পিয়া মনি কিংবা হান্নানই নয়, পারিবারিক অসচেতনতা, টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া, বাল্যবিবাহসহ নানা কারণে নারায়ণগঞ্জে মাধ্যমিক স্তরে এবারের এসএসসি থেকে গত দুই বছরে ঝরে পড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী। মূলত এই ৩ কারণের বাহিরেও আরো কারণ থাকতে পারে। তবে শিক্ষা বান্ধব এ সরকার, শিক্ষা প্রশাসনের মাধ্যমে রখেছেন নানা সুযোগ সুবিধা ও ব্যবস্থা। তাই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের এখনই উদ্যোগী হওয়া উচিৎ।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যারা বসেছে, তাদের মধ্যে গত দুই বছর আগে ২০১৬ সালে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে ছিলো ৪৪ হাজার ৭৪ জন। কিন্তু এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৩০ হাজার ৫৩৬ জন।
বিষয়টি নিয়ে একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া, পারিবারিক অসচেতনতা, শিক্ষা ক্ষেত্রে অবহেলা, পড়ালেখার ব্যায় বহন না করতে পারাসহ নানা কারণেই এ ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বিষয়টিকে কোন ভাবেই মানতে রাজি না হয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এতো শিক্ষার্থী কমার কারণ আমি দেখছি না আর মানতে ও পারছি না। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এতো শিক্ষার্থী ঝরে পরতে পারে এইটা সম্ভব না। আমার কাছে এমন কোন তথ্য নেই। তারপরে ও যদি এমনটা হয়, তাহলে আমি পরে বলতে পারবো।’
এদিকে ঝরে পরার এই বিপুল হার নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই বিশাল পরিমানে শিক্ষার্থী ঝরে পরার কারণ আমি এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা, টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যসহ আরো ২-৩টি কারণে এটা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা কমানোর ব্যাপারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিবো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।